বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, প্রকাশক , জনতারআদালত.কম । ২৩ অক্টোবর, ২০১৭ ।
বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের একজন একনিষ্ঠ সৈনিক, আমার আদর্শিক ভাই, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডঃ এম.এম. সিদ্দিক –প্রায়ই আমাদের রাজনৈতিক আলোচনায় বসে থাকেন, বিশেষ করে- স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সিরাজ শিকদার ও গণবাহিনী এবং চরমপন্থিদের হাতে ৩৬ হাজার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর হত্যার প্রসঙ্গ আসলেই তিনি বিশ্ব রাজনীতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন বক্তব্য ও উনার সুচিন্তিত স্বাধীনতার পরের ঘটনার বাস্তব সম্মত মতামত দিয়ে বলেন- “সকল মুক্তিযোদ্ধাই সব সময়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা নন, কিন্তু সকল রাজাকারই চিরদিনের জন্য রাজাকার।”
উনার মূল্যবান পরীক্ষিত বাস্তব সম্মত উক্তির আলোকে আমার আজকের লেখাটি কঠিন বাস্তবতার মুখে লিখছি। জনগণের রায়ে নয়মাস সশস্ত্র যুদ্ধে বাঙালী জাতির স্বাধীনতা লাভের মহানায়ক- বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সৃষ্ট স্বাধীন বাংলাদেশের কথা।
বিশ্বের মানচিত্রে বাঙালী জাতির জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি হতে ৩০ লাখ মানুষকে শহীদ হতে হয়েছে এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত দিতে হয়েছে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় মুসলিমলীগের দালালদের হাতে। যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। শুধু কি তাই ? পাকবাহিনী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া এদেশীয় দালাল- রাজাকার, আলবদর, আলশামসের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলার সমস্ত সম্পদ ধ্বংস করে এদেশকে শ্মশান ও মরুভূমিতে পরিণত করে দিয়েছিলো। এতেও নরপশু-জল্লাদদের সাধ মিটেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার- আওয়ামীলীগের সরকার প্রতিষ্ঠিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, ঠিক তখনই স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি- রাজাকার, আলাবদর, আলশামসের ইঙ্গিতে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সৃষ্টি হয় সিরাজ-শিকদার পার্টি ও গণবাহিনী। তাদের হাতেই ১৯৭৪ সালে নিহত হয় ৩৬ হাজার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী। সিরাজ শিকদার –নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার বোন ভাস্কর্য শামীম শিকদার –এখন তার ইস্কাটনের বিশাল অট্টালিকার সামনে একমাত্র জাতির পিতার ভাস্কর্য নিজ হাতে তৈরি করে স্থাপন করে রেখেছেন। যেখানে প্রতিদিন তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন- “সিরাজ শিকদারকে আমার ভাই বলতে ঘৃণা বোধ করি। সে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী, ক্ষমতালোভী এবং একজন খুনি। সে ছিলো পাকিস্তানী গুপ্তচর, মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী।”
সিরাজ শিকদার
আরেক খুনে পার্টি হলো- গণবাহিনী। পাঠক, আপনারা অবশ্যই জানেন, সিরাজ শিকদারের মতো গণবাহিনীও সৃষ্টি করেছিলো মুক্তিযোদ্ধা নামক পবিত্র বিশেষণটি ব্যবহার করা এইসব খুনীরা- যাদের ছিলো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও ক্ষমতার লোভ। এইসব খুনীরা রাজাকার-আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ৩৬ হাজার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, অনেক মুক্তিযোদ্ধাদেরও হত্যা করেছে।
ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানায় ১৯৭৪ সালে আমার সহযোদ্ধা, আমার প্রিয় সাথী- মুক্তিযোদ্ধা মজিদকে হত্যা করেছিলো এই সিরাজ শিকদার পার্টি। ৪২ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মজিদের ছেলে বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করার পর ত্রিশাল থানার তদন্ত ওসি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান- মোখলেছুর রহমান দীর্ঘ দুইমাস ব্যাপক তদন্ত কাজ সমাপ্ত করে নানা রকম বাধা-বিপত্তি ও প্রতিরোধ এড়িয়ে আরেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জেলা এস.পি’র নির্দেশে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
এই প্রথম বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে সিরাজ শিকদার পার্টি ঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হলো। যার মামলা নং ১৬৭/১৬। এই মামলায় অনেক আসামী জেল-হাজতে আছে। কেউ কেউ পলাতকও রয়েছে। বিচার কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের বলতে লজ্জা হয়, এই মামলাতেও একজন মুক্তিযোদ্ধা জড়িত। সে এটি ছাড়াও আরো বহু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। আমি আগেও বলেছি, অনেক মুসলিমলীগের সন্তান- অশুভ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশ করেছিলো।
দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, কায়েদে আজম, লিয়াকত আলী খান প্রমুখ গোলটেবিলে বসে আপোষ ফর্মুলায় বাঙালী জাতিকে ঠকিয়ে ভারতবর্ষ দু’ভাগে ভাগ করে দিলো। এক ভাগ ভারত হলো, অন্যটি পাকিস্তান। পাকিস্তানও হলো দু’ভাগে বিভক্ত, পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান।
পাকিস্তানের রাজধানী হলো পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের দূরত্ব ১২০০ মাইলের। এই ১২০০ মাইল দূর থেকে এসে পাঞ্জাবীরা আমাদেরকে শাসন-শোষণ করতো।
অবহেলিত বাঙালী জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রাম করে অবশেষে গণরায়ে নয় মাস স্বাধীনতা যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের নাম মুছে বাংলাদেশ সৃষ্টি করে। স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানী পরাজিত শক্তির প্রতিশোধের নেশায় তারা উচ্চাভিলাষী, ক্ষমতালোভী, স্বার্থপর, চরিত্রহীন, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিহীন, মুক্তিযুদ্ধের নেতার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশকারী কতিপয় অনুপ্রবেশকারী মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের দলে ভিড়িয়ে ’৭৪ সালে ৩৬ হাজার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে দুর্বল করে দিতে চেয়েছিলো।
জেনারেল নিয়াজি রাজাকারদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেখছেন
তারা শুধু মানুষ মেরেই ক্ষান্ত হয়নি। এসব বাহিনী- থানা ও পুলিশফাঁড়ি লুট করে। খাদ্যের গুদাম ও ব্যাংক লুট করে। রেললাইন উপড়ে ফেলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাও করে। সারাদেশে ১৫ জনের মতো সংসদ সদস্যদের সিরাজ শিকদার পার্টি হত্যা করে। নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ-৪ এর মুক্তিযোদ্ধা এম.পি শ্রমিক নেতা এডঃ ইমান আলীকে কে হত্যা করেছে ।
কারা গফরগাঁও থানা ও ত্রিশালের ধানীখলা পুলিশফাঁড়ি লুট করেছে ? কারা ঈশ্বরগঞ্জ-শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-মোহনগঞ্জ এর ব্যাংক লুট করেছে ? কারা ময়মনসিংহের জনপদে শতশত লোককে “রাতের বাহিনী” সেজে হত্যা করেছে ? কারা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে ? কাদের দ্বারা ময়মনসিংহ জনপদে আইন-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছিলো ? কাদের কারণে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে সরকার থানায় থানায় পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য- রক্ষীবাহিনী ক্যাম্প করেছিলো ? কাদের কারণে দিনের ৫টা পর্যন্ত চলতো সরকারী প্রশাসন আর রাতের বেলায় চলতো সিরাজ শিকদার প্রশাসন ? কাদের কারণে প্রতিটি থানার পুলিশ ২৪ ঘণ্টা বাঙ্কারে থেকে নিরাপত্তা বজায় রাখতো ? আর, লুট করা অস্ত্রগুলি কোথায় গেলো , কি হলো ? –এ সবকিছু যদি জনগণ জানতে চায়, তবে কি খুব বেশি অপরাধ হয়ে যাবে ?
চোরের মায়ের বড় গলা। যারা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী হত্যা করেছে, যারা সিরাজ শিকদারের নামে তথাকথিত অনুপ্রবেশকারী মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে, তাদের নামে কি মামলা করা যাবে না ? তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে ? ’৭৪ সালে আমার প্রিয় নেতা শেখ ফজলুল হক মনি ভাই বলেছিলেন, “আইয়ুব-মুনায়েম এর কর্মচারী দিয়ে শেখ মুজিবের গদি চলতে পারে না।” তাই, তিনি বারবার বঙ্গবন্ধুকে ঘরের শত্রু বিভীষণদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।
সাম্প্রতিক কালে মাননীয় এইচ.টি ইমাম সাহেবও বলেছেন- পুলিশ বাহিনীতে বিএনপি-জামাত ঢুকেছে। তিনি তার বাস্তবতায় কথার যুক্তিও দেখিয়েছেন।
আমি শুধু আজকে ময়মনসিংহ জনপদে ১৯৭৪ সালে সিরাজ শিকদার ও গণবাহিনী কী পরিমাণ ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে তার সামান্য কিছু বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। পাষণ্ড সিরাজ শিকদারের খুনীর দল- খুন, লুটতরাজ, ডাকাতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, দেশে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করা এবং অনেক জায়গায় নারী-নির্যাতন পর্যন্ত করেছে।
ময়মনসিংহ ত্রিশাল থানাতেই ছিলো সিরাজ শিকদার পার্টির মূল ঘাটি, যা আমি আমার পূর্বের লেখাগুলিতেও কয়েকবার উল্লেখ করেছি। ত্রিশাল থানায় সিরাজ শিকদার পার্টি কর্তৃক ঘটিত হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসাত্মক কাজকর্মে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী তথাকথিত ১৫/১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো –তা জনসাধারনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই উঠে এসেছে।
সাম্প্রতিককালে, সিরাজ শিকদার পার্টি কর্তৃক ঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসাত্মক কাজের বিচারের জন্য ৩টি মামলা হয়েছে। যাদের মামলা নং ৭০২(ক)/১৭ ও ৭০২(খ)/১৭, ত্রিশাল থানা এবং মামলা নং ৮১৬/১৭, কোতওয়ালী থানা। উল্লিখিত মামলা ৩টিতে আসামী হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী ৭ জন আদর্শ বিমুখ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।
ত্রিশাল থানার রাজাকার ওসি ফারুকের ছোটো ভাই, মুসলিমলীগ নেতা এডঃ সিরাজুল হকের ছেলে কামাল পাশা এবং চরমপন্থী পূর্ব-পাকিস্তান বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য রফিকুল ইসলাম রুহি, মজিবুর রহমান, ফেরদৌস এবং গলাকাটা সিরাজ শিকদার পার্টির- সদস্য সামছুল হক, কাশেম, করিম মাষ্টার প্রমুখ উল্লিখিত বকধার্মিক ব্যক্তিগণ কোন চরিত্রের মুক্তিযোদ্ধা ? এদের নেই আদর্শ, নেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, নেই মুক্তিযুদ্ধের নেতার প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ। এরা করেনি ছাত্রলীগ, করেনি কখনো আওয়ামীলীগ।
ঘটনার ২/৩ দিন আগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানায় জেলার এস.পি সাহেব আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নের স্বার্থে জনসভা করে বলেছিলেন, খুনি সিরাজ শিকদার পার্টির লোকদের ধরিয়ে দিতে। উক্ত সভায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সভাপতিত্ব করেছিলেন। আরও ছিলেন এস.পি নসুরুল্লাহ খান। তিনি আমাকে খুব আদর করতেন। আমি এস.পি সাহেবকে চাচা বলে ডাকতাম। নসুরুল্লাহ সাহেব ডি.এম.পি কমিশনার হয়েছিলেন। চাচার সাথে এখনও পার্কে দেখা হয়, সকালে হাটার সময়। দু’জনে বসে অতীতের অনেক স্মৃতি আলোচনা করি। সিরাজ শিকদার পার্টির অত্যাচার থেকে আমার এলাকার মানুষ যাতে নিরাপদ থাকতে পারে, তিনি সবসময় এই চেষ্টাই করেছেন আপ্রাণভাবে।
উল্লিখিত পুলিশ-জনতার সভার সভাপতি চেয়ারম্যান সাহেবকে ২/৩ দিন পর ১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে দিনের বেলায় গুলি করে মানুষজনের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের সরিয়ে দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। কি নির্মম ঘটনা ! তার একমাত্র ছেলে ধানক্ষেতে লুকিয়ে থেকে তার বাবার হত্যাকাণ্ডের সমস্ত দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছে। কে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে ? কেনোই বা সে বিচার চাইবে ? কোন সাহসে তার বাবার হত্যার বিচার চাইবে ? কারণ, ঐ খুনীরা অনেক শক্তিশালী। সিরাজ শিকদারের হত্যাযজ্ঞের বিচার তো ত্রিশালবাসী চেয়েছিলো, পেয়েছে কি ? এম.পি ইমান আলী হত্যার বিচারও তো চাওয়া হয়েছিলো, কিন্তু বিচারের বাণী তো নীরবে-নিভৃতে কাঁদে ! উল্টো, সিরাজ শিকদার পার্টির খুনীরা মুক্তিযোদ্ধার লেবেল গায়ে লাগিয়ে মামলাকে আটকিয়ে দিতে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে।
আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি। মুসলিমলীগের সন্তানরা পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশ করে, এরপর ’৭৪ সালে সিরাজ শিকদারের পার্টির সদস্য হয়ে বহু মানুষকে খুন করেছে। এখন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায়। এই সিরাজ শিকদারের লোকেরা এখন মুক্তিযোদ্ধার তকমা লাগিয়ে তাদের অপকর্ম ঢাকতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাথে পাচ্ছে আওয়ামীলীগের হাইব্রিড নেতাদের। আবার, তারা কোনো কোনো জায়গায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী সেজে মানুষের মন বিষিয়ে দিচ্ছে। এরাই কিন্তু হাইব্রিড আওয়ামীলীগার। তাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমার প্রিয় সাথী জনাব ওবায়দুল কাদের- সংগঠন থেকে এইসব হাইব্রিড ও মুসলিমলীগের সন্তানদের বের করে দিতে সকলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
ময়মনসিংহ জেলার জনপদে সিরাজ শিকদার পার্টি শতশত লোককে হত্যা করেছে। তাই, সরকার ’৭৪ সালে প্রায় প্রতি থানায় একাধিক রক্ষীবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করেছিলো পুলিশকে সহায়তা করার জন্য। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মজিদের পোস্টমর্টেম রিপোর্টের জন্য ময়মনসিংহ হাসপাতালে যাই গত বছর। ময়মনসিংহ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ছিলো শংকর নামের এক ভদ্রলোক। আমার উদ্দেশ্য জেনে তিনি হেসে আমাকে বলেছিলেন- দাদা আপনার কতো সাহস ? আপনি এদের বিচার করাতে পারবেন না। উনি বললেন, আমার বাড়ি ফুলবাড়িয়া থানায়। আমার বাবাকেও সিরাজ শিকদার পার্টি গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমরা তো মামলাও করতে পারিনি ! কারণ, তারা আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। বাবার খুনীরা আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়। কিছুই করার নেই।
এডঃ অজিত চক্রবর্তী ময়মনসিংহ জজ কোর্টে ওকালতি করেন। তার ছোটো ভাই মাষ্টার অরুণ চক্রবর্তীকে কোতওয়ালী থানার ভাবখালীর নিজ বাড়ি থেকে রাতের বেলায় ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে, যার লাশ আজও পাওয়া যায়নি। নিরীহ অজিত চক্রবর্তী আজ অবধি মামলা করার সাহস পাননি। এম.পি ইমান আলীকে হত্যা করেছে মুক্তিযোদ্ধা তকমাধারী কতিপয় সন্ত্রাসী। সেটিরও আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। কেনো হয়নি –সে জবাব কে দেবে ?
ত্রিশালের বালিপাড়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সভাপতি শ্রী নগেন্দ্র আচার্য্যকেও রাতের বেলা ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে। আরও হত্যা করেছে আওয়ামীলীগ নেতা আমির উদ্দিন, খলিলুর রহমান, মদন সরকার, কলিমুদ্দিন চেয়ারম্যান এবং আরো অনেককেই হত্যা করেছে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী মুক্তিযোদ্ধার লেবাসধারী সিরাজ শিকদার পার্টির সদস্যরা। উপরোক্ত ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ডঃ আবুল বারাকাত
ত্রিশাল থানার সমস্ত খুনী-রাজাকারদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে মামলা করেছি। ২জন ধরা পড়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। আশা করছি, অচিরেই চার্জশিট সাবমিট হয়ে বিচারকাজ আরম্ভ হবে। আমার খুবই প্রিয় এবং আন্তরিক সাথী- ডঃ আবুল বারাকাত। উনি আমার পরিচালিত একটি টিভি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন- “বি.এন.পি, জামাত-শিবির ও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী –সবারই উৎস হলো মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি।” সবাই একটু গভীরভাবে ডঃ আবুল বারাকাতের উক্তিটি মূল্যায়ন করলে বুঝতে পারবেন- দেশ, জাতি ও মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের দল আওয়ামীলীগ ও তার নেত্রীকে ধ্বংস করতে চায় একমাত্র এই মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিরাই।
উল্লেখ্য যে, ময়মনসিংহ জেলা জনপদে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকল্পে ও জনগণকে নিরাপদ রাখতে পুলিশ বাহিনী ও রক্ষীবাহিনীর যৌথ কার্যক্রম ও আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে জেলা জনপদের মানুষেরা নিজেরাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অস্ত্রশস্ত্র সহ অনেক সিরাজ শিকদারের খুনী সদস্যদের পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর হাতে যে তুলে দিয়েছে, তারও অনেক প্রমাণ পাওয়া যাবে।
আমার যতোদূর মনে পড়ে, ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসের কোনো একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ময়মনসিংহ সার্কিট হাউসে আসবেন –সেই উপলক্ষ্যে সিরাজ শিকদার পার্টির ১৩৫০ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর ২য় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়নের শপথ নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানাতে চান। কিন্তু সেদিন ঢাকায় জাতির পিতার জরুরী কাজ থাকায় মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম হেলিকপ্টার যোগে সার্কিট হাউজে আসেন এবং অন্যান্য কাজের মাঝে তিনি সিরাজ শিকদার পার্টির সদস্যদের আত্মসমর্পণের অভিবাদন গ্রহণ করেন। তাদেরকে শপথবাক্য পাঠ করালেন। আশা করি, এসব তথ্য সবই প্রশাসনে সংরক্ষিত আছে।
পরিশেষে বলতে চাই, আমি পূর্বের একটি লেখাতেও বলেছি- আমাদের পুলিশ বাহিনী খুবই দক্ষ, মেধা সম্পন্ন, আন্তর্জাতিক মানের এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এক সুশৃঙ্খল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আপনারা চেষ্টা করলেই সিরাজ শিকদার ও গণবাহিনী দ্বারা ময়মনসিংহ জনপদে হওয়া সকল হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসাত্মক কাজের তথ্য উদ্ঘাটন করে আসামীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ্, মুক্তিকামী জনতা আপনাদের সাথে আছে এবং থাকবে।