ডেস্ক রিপোর্ট , জনতারআদালত.কম ।।
আজ থেকে শুরু হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগের (ডিপিএল) সুপার লিগের ম্যাচে বর্তমান চাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডকে উড়িয়ে দিলো প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
আজ থেকে শুরু হওয়া ডিপিএলের সুপার লিগ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের কাছে ১৪২ রানের বড় ব্যবধানে হার মানে আবাহনী। লিগের প্রথম পর্বে প্রাইম ব্যাংককে ২৮ রানে হারিয়েছিলো আবাহনী।
এই জয়ে ১১ ম্যাচ শেষে আবাহনীর সমান ১৪ পয়েন্ট হলো প্রাইম ব্যাংকের।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে আবাহনী। ব্যাট হাতে দারুণ সূচনা পায় প্রাইম ব্যাংক। উদ্বোধনী জুটিতে ৯৯ বলে ৯৭ রানের জুটি গড়েন প্রাইম ব্যাংকের দুই ওপেনার ইনফর্ম আনামুল হক ও শাহাদাত হোসেন। জুটিতে ৩৮ রান তুলে প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন শাহাদাত।
মিডল-অর্ডারে মোমিনুল হক ৮ ও নাসির হোসেন ৬ রান করে থামলেও, এবারের আসরে ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন আনামুল। হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭৭ রানে আউট হন তিনি। ৮৬ বল খেলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন আনামুল। ফলে এবারের আসরে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় শীর্ষে উঠলেন আনামুল। ১১ ইনিংসে তার রান ৮০৫।
আনামুল ফিরলে, পরের দিকে অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন ৪৪, ইয়াসির আলি ৪৩ ও মাহেদি হাসান ২৭ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করেন। ফলে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৩ রান তুলে প্রাইম ব্যাংক।
আবাহনীর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ২টি, আরাফাত সানি-শহিদুল ইসলাম-তানভীর ইসলাম ও মোসাদ্দেক হোসেন ১টি করে উইকেট নেন।
২৭৪ রানের জবাবে শুরুতেই মহাবিপদে পড়ে আবাহনী। ৩৪ রানের ৫ উইকেট হারায়। শুরুর ধাক্কা পরবর্তীতে আর কোন ব্যাটার সামাল দিতে পারেননি। ফলে ৩২ দশমিক ৪ ওভারে ১৩১ রানে নিজেদের ইনিংস গুটিয়ে নেয় আবাহনী। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। তার ৫৭ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিলো।
প্রাইম ব্যাংকের রাকিবুল হাসান-নাসির ৩টি করে এবং মাহেদি হাসান-তাইজুল ইসলাম ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন প্রাইম ব্যাংকের আনামুল।
ভারতের পারভেজ রসুলের অলরাউন্ড নৈপুন্যে আজ থেকে শুরু হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগের (ডিপিএল) সুপার লিগে নিজেদের ম্যাচে সহজ জয় পেয়েছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ৭২ রানে হারিয়েছে শেখ জামাল। এই জয়ে ১১ ম্যাচ শেষে ১০ জয়ে ২০ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপার পথে ভালোভাবেই টিকে রইলো শেখ জামাল। আর ১১ ম্যাচে ৫ জয় ও ৬ হারে ১০ পয়েন্ট গাজীর।
সাভারের বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেয় গাজী গ্রুপ। প্রথমে ব্যাট হাতে নেমে দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন শেখ জামালের দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও রবিউল ইসলাম রবি। ১৭ দশমিক ৩ ওভারে ৭৮ রান করেন তারা। তবে ১৬ রানের ব্যবধানে বিদায় নেন দুই ওপেনার। সাইফ ২৫ ও রবি ৫৮ রান করেন।
তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি। দলীয় ১২২ রানে ইমরুলের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান ও রসুল। গাজীর বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন নুরুল ও রসুল। এতে সহজেই দলের স্কোর আড়াইশ পেরিয়ে যায়। দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। ১১৮ বল খেলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৪১ রান যোগ করেন তারা।
নুরুল-রসুল, দু’জনই ৭৩ রান করে করেন। নুরুল ৭২ বল খেলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন। আর ৬৪ বল খেলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন রসুল। নুরুল-রসুলের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭১ রানের সংগ্রহ পায় শেখ জামাল। গাজীর ভারতীয় স্পিনার ধ্রুব রঞ্জন শোরে (উযৎাঁ জধহলধহ ঝযড়ৎবু) ৩১ রানে ৩ উইকেট নেন।
জবাবে শুরুটা ভালো না হলেও, লড়াইয়ে থাকার চেষ্টা করেছিলো গাজী গ্রুপ। ৭৭ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন ধ্রুব। সতীর্থদের সঙ্গ ছাড়াই হাফ-সেঞ্চুরিও করেন তিনি। শেষ অবধি ৫৫ রানে আউট হন ধ্রুব। ৭৩ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি।
পরের দিকের ব্যাটাররা বড় ইনিংস খেলতে না পারলে, ৩৭ বল বাকী রেখে ১৯৯ রানে গুটিয়ে যায় গাজী গ্রুপ। গাজীকে বেকাদায় ফেলেন পেসার এবাদত হোসেন ও রসুল। দু’জনই ৩টি করে উইকেট নেন। অলরাউন্ড পারফরমেন্সের কারনে ম্যাচ সেরা হন শেখ জামালের রসুল।
সাব্বিরের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে জয় দিয়ে শুরু মাশরাফিদের:
ডান-হাতি ব্যাটার সাব্বির রহমানের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে আজ থেকে শুরু হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগের (ডিপিএল) সুপার লিগ জয় দিয়ে শুরু করলো মাশরাফি বিন মর্তুজার লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জ।
সাব্বিরের ১১১ বলে ১২৫ রানের উপর ভর করে লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জ ৫৫ রানে হারিয়েছে রুপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে। লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের জয়ে অবদান ছিলো বাঁ-হাতি স্পিনার নাবিল সামাদেরও। ১০ ওভার বল করে ৪৭ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাব্বির।
সাভারের বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৩৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জ। সাব্বির হোসেন ৭ ও রাকিবুল হাসান ১৬ রান করেন।
তৃতীয় উইকেটে সাব্বির ও ইনফর্ম নাইম ইসলাম দলের বড় স্কোরের ভিত গড়েন। ১৩২ বল খেলে ১১৩ রান যোগ করেন তারা। এরমধ্যে ৮৮ বলে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১৬৯ ম্যাচে চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাব্বির। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাব্বির। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে।
তবে ঢাকা লিগে ২০১৬ সালে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাব্বির। মিরপুরে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ৯৭ বলে ১০০ রান করেছিলেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলতে নামা সাব্বির।
আজ শেষ পর্যন্ত ১১১ বল খেলে ৮টি করে চার-ছক্কায় ১২৫ রান করেন সাব্বির। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটিই তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
সাব্বিরের মত ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন ভারতের চিরাগ জানি। ৬৬ বলে অপরাজিত ৯৫ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ৪টি চার ও ৭টি ছক্কা ছিলো। শেষদিকে মাশরাফি ১৫ বলে ১৭ ও ইরফান শুক্কুর ৫ বলে ৮ রান করেন। ফলে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩২৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জ। এবারের আসরে এটিই তাদের সর্বোচ্চ দলীয় রান।
৩২৬ রানে বড় টার্গেটে খেলতে নেমে লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে রুপগঞ্জ টাইগার্স। দুই স্পিনার সঞ্জিত সাহা ও মাশরাফির তোপে ৫৯ রানেই চতুর্থ উইকেট হারায় তারা। এরমধ্যে ২ উইকেট ছিলো সঞ্জিতের।
ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে নামা পাকিস্তানের সাদ নাসিম এক প্রান্ত আগলে, লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের বোলারদের বিপক্ষে একাই লড়াই করেছেন। সতীর্থদের সঙ্গ না পেলেও, সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান নাসিম। ১১৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেও, দলের হার রুখতে পারেননি নাসিম। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭০ রান করে রুপগঞ্জ টাইগার্স।
৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৭ বল খেলে নিজের ইনিংসটি সাজান নাসিম। প্রতিপক্ষের মিডল-অর্ডার ব্যাটারদের বড় রান করতে দেননি লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের নাবিল। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে চতুর্থবারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নেন নাবিল। এছাড়া সঞ্জিত ২টি, মাশরাফি-মেহেদি হাসান রানা ১টি করে উইকেট নেন।
এই জয়ে ১১ ম্যাচে ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে থাকলো লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জ। আর ১১ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চমস্থানে রুপগঞ্জ টাইগার্স।