বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, প্রকাশক, জনতারআদালত.কম । ১১ নভেম্বর, ২০১৭ ।
১১ই নভেম্বর, এশিয়ার সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সবাইকে জানাই অভিনন্দন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আজীবনের সাধনা- সুখি-সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা বাস্তবায়ন। ১৯৭১ সালে বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালাল- রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা শ্মশানে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু, তাই বলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন থেমে যেতে পারে না।
আগেই বলেছি, বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সাধনা- সোনার বাংলা কায়েম করতে হবে। সোনার বাংলা কায়েম করতে হলে সোনার মানুষ অবশ্যই তৈরি করতে হবে। তা অবশ্যই যুবসমাজের মধ্য থেকেই করতে হবে। কারণ, যুবকরাই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। যুবকরাই পেরেছে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে নয়মাস যুদ্ধ করে পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাঙালী জাতির জন্য বাংলাদেশ তৈরি করতে। যুবকরাই পারবে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় মুসলিমলীগের দালালদের দ্বারা শ্মশানে পরিণত সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আজীবনের সাধনা সুখি-সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়তে। নয়মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে নব্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশকে সর্বক্ষেত্রে শান্তির দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অনুভব করলেন, একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত যুবসমাজই পারবে সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে।
তাই, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অন্যতম সর্বাধিনায়ক, অনলবর্ষী বক্তা, তুখোড় রাজনীতিবিদ, কিংবদন্তী সাংবাদিক, অসম সাহসী, বীর মুক্তিযোদ্ধা- জনাব শেখ ফজলুল হক মণিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নির্দেশ দেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত যুবসমাজকে একত্রিত করে একটি প্রগতিশীল যুব-সংগঠন গড়ে তোলার জন্য। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পেয়ে জনাব শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৭২ সনের ১১ই নভেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট অডিটোরিয়ামে সারাদেশের যুবসমাজের প্রতিনিধিদের এক সম্মেলন আহ্বান করেন। সেই সম্মেলনে আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো যুবসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের। সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর প্রেরিতবাণী পাঠ করে শুনানো হয়। সম্মেলনে শ্রদ্ধেয় মণি ভাইয়ের তেজস্বী বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী যুব প্রতিনিধি সকলেই ঐক্যমত পোষণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ –নামে একটি প্রগতিশীল যুব-সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। যার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শ্রদ্ধেয় শেখ ফজলুল হক মণি।
শুরু হল বর্তমানে দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী যুবসংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের অগ্রযাত্রা। শ্রদ্ধেয় শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রত্যেক জেলায় জেলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী যুবক ও মহিলা যুবকর্মীদের সমাবেশ ঘটিয়ে আওয়ামী যুবলীগের আদর্শ-উদ্দেশ্য প্রচার করে কয়েকমাসের মধ্যে যুবলীগকে বিশাল যুব-সংগঠনে পরিণত করেন। তা অল্প সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র শ্রদ্ধেয় শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের মতো তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন, মেধাবী, স্পষ্টভাষী একজন অকুতোভয় নির্ভীক মুজিববাদী আদর্শে বিশ্বাসী সৈনিকের পক্ষেই। মণি ভাই সারাদেশে তথা বিশ্বের যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তার একটি শ্লোগান দিয়ে, “এ সমাজ ভাংতে হবে, নতুন সমাজ গড়তে হবে”। তাহার এই মহা মূল্যবান শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের যুব সমাজ কে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা দিয়ে কোন দিনই মানুষের মঙ্গল হতে পারে না। এই সমাজ ব্যবস্থা বৃটিশ শাসিত ঘুনে ধরা ভঙ্গুর সমাজ ব্যবস্থা ।এই সমাজ ব্যবস্থাকে গনতান্ত্রীক উপায়ে ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে হবে। আর বিপরিত দিকে তৈরী করতে হবে শ্রেনী বিভেদহীন জনমানুষের অর্থনৈতিক বৈশম্যহীন সমাজ ব্যবস্থাসহ সামগ্রীক কল্যানের জন্য। তিনি বললেন,` উক্ত মহৎ কাজটি সমাধা করতে হলে সর্বাগ্রে সচেতনভাবে যুব সমাজকে দৃঢ় ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কোনরূপ তন্ত্রমন্ত্র দিয়া দেশের মঙ্গলজন কাজ হবে না `।
মানুষের জন্য সমাজের জন্য কোন ভাল কাজ করতে হলে ওপৌন্যবেশিক শোষনহীন সার্মাজ্য, ধ্যান-ধারনা বাদ দিয়ে নতুন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আমরা আওয়ামী যুব লীগের কর্মিরা শ্রদ্ধেয় মনি ভাইয়ের অমর বাণী “এ সমাজ ভাংতে হবে, নতুন সমাজ গড়তে হবে” হাতে লেখা পোষ্টার শহর-বন্দর, থানা, গ্রাম অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু করলাম। শ্রদ্ধেয় মনি ভাই জনগনের মুক্তির সনদ মুজিববাদ কায়েমের লক্ষ্যে উক্ত শ্লোগান সামনে রেখে সারা দেশে সাংগঠনিক কাজে ঝটিকা সফরে বাহির হলেন। আমার জীবনে পরম সৌভাগ্য হয়েছিল মনি ভাইয়ের সফরে একজন সাধারন কর্মী হয়ে থাকার । আমি দেখেছি বিভিন্ন জেলায় রাত পর্যন্ত সমাবেশে নেতার তেজস্বী কণ্ঠে দিক নির্দেশনা মূলক বাণই “এ সমাজ ভাংতে হবে, নতুন সমাজ গড়তে হবে” । মনি ভাই মস্কো, ভারত, পূর্ব জার্মান ও বিশ্বের সমজাতান্ত্রীক দেশগুলিতে বিভিন্ন সেমিনারে উনার শ্লোগানের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য রেখে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন যার ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশের বামপন্থি নেতারা মস্কো বা বার্লিন ও কিউবায় রাজনৈতিক কারণে সফরে গেলে ঐসব দেশের নেতারা বলতেন বৈশম্যহীন কায়েমের লক্ষ্যে কোনরূপ দিক নির্দেশনা বক্তব্য বা কর্মসুচি জানতে হলে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশের যুব সমাজের নয়নমনি তুখোড় বক্তা শেখ ফজলুল হক মনির কাছে যান। তখনকার সময় আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে এই সব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পেতাম।
তার প্রমান আমরা নিজেরাই চোখে দেখলাম। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রথম সম্মেলন ১৯৭৪, স্থানঃ আউটার স্টেডিয়াম, ঢাকা। দেশী বিদেশী হাজার হাজার যুব প্রতিনিধির উপস্থিতে আউটার স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ। মঞ্চের বাহিরেও হাজার হাজার মুক্তিকামি মানুষের ঢল, কিন্তু সু-শৃঙ্খলভাবে অবস্থান করছেন উপস্থিত সবাই। সময়ক্ষন করছেন কখন আসবেন আজকের ঐতিহাসিক সম্মেলনের প্রধান অতিথী ইতিহাসের রাখাল রাজা বাংলার মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। কিছুক্ষন এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আগমন বার্তা শোনার সাথে সাথেই চারিদিকে জয়জয়কার “ জয় বাংলা, জয় বন্ধবন্ধু” শ্লোগান মুখরিত হয়ে উঠলো। মহানায়ক বঙ্গবন্ধু আসলেন, শ্রদ্ধেয় মনি ভাই জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে উঠলেন এবং আমনন্ত্রিত বিদেশী অতিথিদের সাথে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় করিয়ে দিলেন । যুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হলো, দুই লাখ মা-বোন ইজ্জত দিলো পাকিস্তানী ও তাদের এদেশীয় দোষর-রাজাকার, আলবদর, আল-শামসদের হাতে এবং সারা বাংলাদেশকে ধ্বংস স্তুপে পরিনত করে দিয়েছিল, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছিল পাকবাহিনী। দেশে কিছুই রেখে যায়নি পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও তাদের এদেশীয় মুসলিম লীগের দালালরা। চারিদিকে কৃত্রিম অভাব, মারাত্মক বন্যায় খাদ্য সংকট, চারিদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তির ইন্ধনে আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিভীষনের লোকদের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানী প্রতিনিয়ত এক অশান্তির রূপ ধারণ করে। তারই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গঠিত, মনি ভাইয়ের শুদক্ষ নেতৃত্বে আওয়ামী যুবলীগের ঐতিহাসিক প্রথম জাতীয় সন্মেলন দেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মন খুশীতে ভরে যায়। যার ফল আমরা পেলাম সাথে সাথেই। বঙ্গবন্ধু মনি ভাইকে আদর স্নেহে ভরিয়ে দিলেন।
মনি ভাইসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত বিদেশী অতিথিগন বক্তৃতা দিলেন। সকল অতিথিই বঙ্গবন্ধু কে অগাধ সন্মান জানিয়ে বক্তৃতা দিলেন এবং সালাম করলেন শ্রদ্ধেয় মনি ভাই কে । অতিথি সকল বক্তাই বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বিশেষ করে মনি ভাইয়ের তেজোদৃপ্ত বক্তৃতা শুনে ভারতের যুব কংগ্রেসের সভাপতি প্রিয়রঞ্জন দাস মনি ভাইয়ের পা ছুয়ে প্রণাম করলেন। উপস্থিত হাজার হাজার প্রতিনিধি পরম পাওয়া এই দৃশ্য দেখে অভিভুত ও মুগ্ধ। আবারও বঙ্গবন্ধু মনি ভাইকে ইশারায় ডেকে কাছে নিয়ে পরম আদরে ভরিয়ে দিলেন। বাঙ্গালীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বক্তৃতার মঞ্চে দাড়িয়ে বললেন আমার আজ সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে গেল আজকে তোমাদের সম্মেলন দেখে। বঙ্গবন্ধু বললেন, আমার আশা এবং দৃঢ় বিশ্বাস, পাকিস্তানীরা আমাদের শেষ করতে পারে নাই তার জলন্ত প্রমান আজ ঐতিহাসিক যুব সমাবেশ।
বঙ্গবন্ধু বললেন আমার জীবনে দুইটা আশা, একটি বাঙ্গালী জাতির জন্য স্বাধীন আবাসভূমি বাংলাদেশ, অন্যটি সুখী সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করা। আমরা অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পরে নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ করেছি। বাকী আছে সোনার বাংলা কায়েম করা। তিনি বললেন, এই কাজটি যুদ্ধের চেয়েও ০ বড় কাজ। বাস্তবায়ন কঠিন হলেও তোমাদের পক্ষে সম্ভব। তাই আমার জীবনের আরাদ্ধ সাধনা বাঙ্গালী জাতির সার্বিক উন্নতির জন্য সত্যিকারের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করা। সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করতে হলে সোনার মানুষের দরকার। তিনি বললেন আমার বিশ্বাস এবং প্রাণভরা আশা, শেখ মনির নেতৃত্বে যুবলীগের কর্মিরাই সোনার মানুষ হয়েই আমার সাধনার সোনার বাংলা কায়েম করবেই। উপস্থিত সবাই দু’হাত তুলে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সোনার মানুষ হওয়াই অঙ্গীকার করলেন, জাতির পিতা তাঁর জীবনের আরাদ্ধ সাধনা সোনার বাংলা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারে দৃশ্য দেখে আবেগ-আপ্লুত হয়ে উপস্থিত সবার জন্য দোয়া করে উনার দিক নির্দেশনা মুলক বক্তৃতা শেষ করে মঞ্চ ত্যাগ করলেন।
দ্বিতীয় পর্ব সন্ধ্যার পর আরম্ভ হলো। শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি বক্তৃতা দিচ্ছেন তখনই স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি আমাদের ভিতর লুকিয়ে থাকা ইয়াজিদের বংশধর মীর জাফরের গোষ্ঠী বিভীষনের দল আউটার ষ্টেডিয়ামের বাহিরে ৪/৫টি গ্রেনেড বিস্ফোরন ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সম্মেলন বানচাল করতে চেয়েছিল । কিন্তু অদম্য সাহসী তেজস্বী বক্তব্যরত মনি ভাই উচ্চস্বরে নির্ভয়ে সবাইকে বললেন, “আপনারা বসুন আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমরা বীরের জাতি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। যুদ্ধক্ষেত্রে বুলেট, বোমা, কামান, মেশিন গান কোন কিছুতেই তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি ইনশাআল্লাহ । বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আবার সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সাধনা সোনার বাংলা কায়েম করবোই । জয় বাংলা জয় বঙ্গ বন্ধু।”
মনি ভাইয়ের নির্দেশ মেনে সবাই নির্ভয়ে, নিঃসংশয়ে মনোমুগ্ধ হয়ে নেতার তেজাদৃপ্ত বক্তৃতা শুনছিলাম। শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান মনি ভাই উচ্চস্বরে বললেন আইয়ুব মোনায়েমের কর্মচারী দিয়া মুজিবের গদি চালাতে পারেনা। কি অভূতপূর্ব দৃশ্য, না দেখলে বুঝা যাবে না। সাথে সাথে লোকারন্য সমগ্র ষ্টেডিয়াম “আইয়ুব মোনায়েমের দালালের হুশিয়ার সাবধান, মনি ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে, মুজিবের বাংলায় পাকিস্তানিদের ঠাই নাই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু” শ্লোগানে শ্লোগানে সমগ্র ষ্টেডিয়াম এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। মনি ভাই সেই সময় বক্তব্য দিয়া সম্মেলন স্থলের উত্তেজনা প্রশমিত করেন। ৪৫ বৎসর আগের ঘটনা ,অনেক কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যায়। মনে পড়া স্মৃতির সমস্ত কথা লিখলে পাঠকের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাবে, কারণ বর্তমানে মানুষ খুবই অস্থির, শুধু ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে এদিক-দিক দৌড়াদৌড়ি করেন। দেশের মানুষের মঙ্গলের কথা কম মানুষই আছেন যারা চিন্তা করেন, ভাবেন।
তখন ঢাকা আসলেই বাংলার বাণী অফিসে মনি ভাইয়ের সাথে দেখা করতাম। মনি ভাই আমাকে খুবই আদর করতেন, ময়মনসিংহ জনপদে যখন সিরাজ শিকদার পার্টি মানুষ খুন করে, পুলিশ থানা ফাঁড়ি লুট করে, রেলওয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিত, যাদের ভয়ে পুলিশ রাতের বেলায় থানা থেকে বাহির হতো না, থানায় থানায় বাংকার করে আতংকের মধ্যে থাকতো তখন স্বাধীনতার সুতিকাগার, আমাদের সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতারা ঢাকায় এসে থাকতো। ময়মনসিংহ শহরে সিরাজ শিকদার পার্টি হরতাল করতো।আজকের হাইব্রীড মার্কা নেতারা তখন কে কোথায় ছিল, তা সবারই জানা। শ্রদ্ধেয় মনি ভাইয়ের সাথে যখন দেখা হতো তখনি আমাকে সাবধান থাকতে বলতেন আর বলতেন তুই সাবধানে থাকিস, তোর জন্য আমরা সবাই চিন্তা করি। একদিন বাংলার বানী পড়ে দেখি আমার পরম শ্রদ্বেয় মনি ভাই ফিচার লিখছেন তার মর্মাথ হলো। পাকিস্তানী পরাজিত শক্তির ইঙ্গিতে ও অর্থায়নে আইয়ুব, মোনায়েমের পালিত কর্মচারীরা সামরিক বেসামরিক সবাই মিলে তথাকথিত উচ্চাভিলাসী বাম পন্থীদের সাথে হাত মিলিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করবে। পাকিস্তানীদের জেদ বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাদের হত্যা করবে বা চাকুরীচ্যুত করবে। মোট কথায় এসব করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীদের পাকিস্তানী পন্থী বানাবে। বিপ্লব প্রতি বিপ্লব ঘটিয়ে তাদের আসল লোককে ক্ষমতায় বসাবে। মুসলিম লীগের কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানাবে। রাজাকারদের জেল খানা থেকে মুক্ত করে দিবে। মনি ভাই এইসব জানতে পেরে জেলায় জেলায় যুবলীগ সংগঠিত ও শক্তিশালী করলেন। আর সরকার এদিকে প্রত্যেক জেলার ওপরে থানায় থানায় পুলিশ সহযোগিতা করার জন্য রক্ষী বাহিনী ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
পশ্চিমা শক্তির ইশারায় পাকিস্তানীদের লেলিয়ে দেয়া অশুভ শক্তি প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পূর্বেই অর্থাৎ আঁচ করতে পেরেই ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট ভোর বেলায় বঙ্গবন্ধুর ৩২নং এর বাড়ী ঘেরাও করে ফেলে বিপথগামী কিছু সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। কিন্তু হত্যাকারিদের পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সিদ্ধান্ত ছিল শেখ মনিকে না মেরে বঙ্গবন্ধুকে মারা যাবেনা। খুনীদের বদ্ধমূল ধারনা ছিল বঙ্গবন্ধুকে মারলে বা ক্ষমতাচ্যুত করলে আর শেখ মনি যদি বেচে থাকে তবে সব কিছুর জন্য চুড়ান্ত বিচার করবেই এবং তাদের সমস্ত উদ্দেশ্য ভন্ডুল হয়ে যাবে। তাই খুনীরা সর্বপ্রথম মনি ভাইকে হত্যা করে। সিগনাল পাঠানোর পর কর্নেল রশিদ, ফারুক, রিসালদার মোছলেম প্রমুখ বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায় সৃষ্টি করে। বাঙালী জীবনে কলংকের কালীমা লেপিয়ে দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ রা নভেম্বর জাতীয় চারনেতা ৭ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হত্যা এবং ২০০৪ সালের একুশে আগষ্ট জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জন নেতাকর্মী হত্যা করে সেই আইয়ুব মোনায়েম কর্মচারীরা ।
আজ ২০১৭ সাল, অতি নিকটে ২০১৮ নির্বাচনী বৎসর। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার মর্মান্তিক ঘটনা চক্রান্তকারীরা কোন সময় ঘটাতে পারতো না যদি পুলিশ বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা তাদের চাকরীর বিধিমালা শুধুমাত্র দেশ ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে স্বচ্ছতায় নিজের কর্তব্য কাজে দায়িত্ব পালন করতো।
পাঠকের আর বেশি বিচ্যুতি না ঘটিয়ে পরিশেষে বলতে চাই, ‘কান্ডারি হুশিয়ার’- প্রশাসনের ভিতরে এখনো জিয়া, এরশাদ, খালেদা, তারেক ও বাবরের নিয়োগকৃত ছাত্র কতিপয় কর্মকর্তা বিদ্যমান। তাদের কথা ও কাজে মিল নাই। তারা দিনের বেলায় একরুপ আর রাতের বেলায় অন্য রুপ। তাদের চিহ্নিত করে সর্বক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কায়েম করতে হলে সোনার মানুষ চাই। সোনার মানুষ তৈরি করা খুবই কঠিন কাজ। প্রত্যেক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলার পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলার অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা যদি সৎ ও নিষ্ঠাবান থাকে তবে অবশ্যই প্রত্যেক উপজেলা জাতির পিতার চাওয়া স্বপ্নের সোনার মানুষ দিয়ে ভরে যাবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের যোগ্য উত্তরসূরী, বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যুবলীগের নেতা-কর্মী ভাইয়েরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথে অগ্রগামী ভুমিকা রাখবে এই আশা করেই আজকের লেখার ইতি টানছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু । বাংলাদেশ চিরজীবী হোক ।